বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর আপনার যা করা উচিত

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর আপনার যা করা উচিত? What you should do after BCS Preliminary Exam? কি চিন্তা হচ্ছে? ভাবছেন, এবার কি করবেন? আমাদের আজকের পোস্টটি মূলত তাদের জন্য যারা ইতোমধ্যে ৪৩তম বিসিএস প্রিলিতে অংশগ্রহণ করেছেন। তো চলুন আজকের পোস্টটি সম্পর্কে বিস্তারিত দেখে আসা যাক।

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর যা করবেন

প্রথমত, ৪৩ তম বিসিএস এর টোটাল পরীক্ষার্থীকে আমি ৩ ভাগে ভাগ করব। আর সেটা হছেঃ

১. যারা অলরেডি বুঝে গেছেন প্রিলি পাশ

২. যারা জানেনা পাশ নাকি ফেইল

৩. যারা অলরেডি বুঝে গেছেন প্রিলি ফেইল।

আমার চিন্তা ভাবনা কনফিউজড মানুষদের নিয়ে, যারা ২ নাম্বার গ্রুপের সদস্য। যারা কাটমার্ক নিয়ে চিন্তিত, এর ওর কাছে কাটমার্ক জিজ্ঞেস করছে। রিটেনের জন্য বই কিনবে নাকি কিনবে না, নাকি ব্যাংক জবের প্রিপারেশন নিবে, কথা বলব তাদের নিয়ে।

আপনি এই মুহুর্তে এমন একটা প্রিপারেশন নিবেন, যেটা প্রিলিতে কাজে লাগবে, রিটেনে কাজে লাগবে, ব্যাংক জবের জন্য উপযোগী এমন কি ভাইবার জন্যেও এই পড়াটাই প্রয়োজন।মোদ্দা কথা, প্রিলির রেজাল্ট এর আগ পর্যন্ত এমন প্রিপারেশন হবে যাতে সব চাকরীর পরীক্ষায় এই প্রিপারেশন কাজে লাগে।

ঝরে পড়াদের কী হবে, যা করবেন

বাংলাঃ

আপনি এখন বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য অংশ আবার পড়বেন। প্রবাদ প্রবচন, বাক্য শুদ্ধকরণ,বাংলা বানানের রীতি এসবের জন্য নাইন টেনের গ্রামার বইটা একবার রিভিশান দিয়ে ফেলুন।সাহিত্য অংশের জন্য পিএসসি নির্দেশিত ১১ জন লেখকের জীবনী, প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ আবার পড়েন।সাহিত্যের জন্য সৌমিত্র‍্য শেখর স্যারের বইটি এখন খুব কাজে দিবে।

ইংরেজিঃ

আপাদত আপনার কাজ হচ্ছে প্রতিদিন মিনিমাম ৪ পৃষ্টা করে বাংলা টু ইংরেজি ও ইংরেজি টু বাংলা অনুবাদ করা। অনুবাদ আপনার সব চাকরীর পরীক্ষাতেই লাগবে, সো এটার জন্য সর্বোচ্চ গুরত্ব দেন।বাজারে বই পাওয়া যায়, মোবাইলে ডেইলি স্টার পত্রিকা দেখে বা আপনার যেরকম ইচ্ছা সেভাবেই করেন।কিন্তু এটা প্রতিদিন-ই করবেন। ব্যাংক জব বা অন্য জবের জন্য ইংলিশ প্রিলির প্রিপারেশন চালিয়ে যান।

গণিতঃ

যেহেতু আপনি অবশ্যই বিসিএস এর পাশাপাশি ব্যাংকের প্রিপারেশন নিচ্ছেন আপনি প্রতিদিন ব্যাংকের জন্য ম্যাথ করেন।ব্যাংকে যে ম্যাথ আসে এবং বিসিএস রিটেন এ যে ম্যাথ আসে প্রায় সেম।সো আপাদত আপনি শুধু ব্যাংকের জন্য ম্যাথ করেন, বিসিএস ম্যাথের আলাদা কোন প্রিপারেশনের দরকার নাই। বেসিক খারাপ থাকলে ক্লাস এইটা,নাইন এর দুইটা বই নিয়ে বুঝে বুঝে করেন।

বাংলাদেশঃ

বিসিএস রিটেনে সবচেয়ে বড় সিলেবাস। কারো কাছ থেকে ধার করে এনে নাইন টেনের পৌরনীতি,ইতিহাস ও বাংলাদেশে ও বিশ্বপরিচয় বইগুলো রিডিং পড়েন। কারো কাছে না পেলে nctb এর ওয়েবসাইটে সব পিডিএফ পাবেন। একটা নোট খাতা বানান। বাংলাদেশের অর্থনীতি,উন্নয়ন, জিডিপি, ফরেন ইনকাম,বাজেট, পরিবেশ সম্পর্কিত, বৈদেশিক আয়, নারী উন্নয়ন,মুক্তিযুদ্ধ, বিগ প্রজেক্ট রিলেটেড যত ডাটা পাবেন (গুগল, ফেসবুক বা অর্থনৈতিক সমীক্ষা যেখানেই হোক) সব নোট করে পড়েন। ডাটা মানে চার্ট, গ্রাফ, ৫ বছরের পরিসংখ্যান,বিভিন্ন তথ্য, বাণী ইত্যাদি। যে কোন চাকরীর লিখিত পরীক্ষায় এই তথ্য আপনাকে অনেক এগিয়ে রাখবে। সংবিধানের আরিফ খানের বইটা কিনতে পারেন। সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে কি আছে,কোন অধ্যায়ে কি নিয়ে আলোচনা হইছে, সংশোধনীসমূহ কি কি এটা আইডিয়া নেন। রিটেনে না হলেও প্রিলিতে এটা কাজে লাগবেই।

আন্তর্জাতিকঃ

এটার জন্য প্যারা নিয়েন না। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর আপনার যা করা উচিত। আজকে থেকে প্রতিদিন ইন্টারনেট থেকে ৩-৪টা পত্রিকার আন্তর্জাতিক অংশ ও কলামগুলো পড়া শুরু করে দেন। গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে হলে ২-৪ লাইন নোট করে রেখে দেন। প্রিলি ও রিটেন দুই জায়গায় আপনি এগিয়ে থাকবেন। বিজ্ঞান – যদি আর্টস/কমার্স এর স্টুডেন্ট হোন এবং আপনার মধ্যে বিজ্ঞানভীতি থাকে,তাহলে বলব এখন একটা পাক্কা সময় বিজ্ঞানে এগিয়ে যাওয়ার।নাইন টেনের পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞান বইটা পড়ে ফেলেন। কনফিউজিং জায়গাগুলোর জন্য ইউটিউবে ভিডিও পাবেন, মনে রাখার মত তথ্যগুলো লিখে রাখুন। এই প্রিপারেশন একবার নিলে নেক্সট প্রিলি রিটেনে বিজ্ঞান নিয়ে ভয় অনেকটাই কেটে যাবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ

১. কাট মার্ক কত হবে এটা বলার মত অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা কোনটাই আমার নাই। তবে সবার থেকে শুনে যা বুঝলাম,আপনার মার্ক যদি ১০০-১০৭ এর ভেতরে থাকে আপনি গ্রুপ-২ এর সদস্য। কারণ আপনি আপনার মার্ক যা গুণবেন, ১-২টা প্রশ্ন এদিক ওদিক হলেই ২-৩ মার্ক বেড়ে বা কমে যেতে পারে।

২. বিসিএস এর পাশপাশি ব্যাংকের জন্য ম্যাথ ও ইংলিশে জোর প্রস্তুতি নেন, যেন বিসিএস এর রেজাল্ট হওয়ার আগেই আপনার হাতে ব্যাংক বা অন্য কোন জব থাকে।

৩. বেকারকালীন সময়ের একটা দিন ও নষ্ট করবেন না।একদিন নষ্ট করবেন মানে অন্যজন আপনার চেয়ে একদিন এগিয়ে গিয়ে চাকরীটা পেয়ে যাবে।

৪. যদি এবার পরীক্ষা অনেক খারাপ দিয়ে থাকেন, একদম সোজা হয়ে টেবিলে বসুন। আপনি অনেক পিছিয়ে আছেন।আপনি পরিশ্রম করেন নাই, সিরিয়াস হোন নাই বা ভাগ্য আপনার সাথে ছিল না। নতুন উদ্যমে শুরু করেন। আমার বিশ্বাস নেক্সট প্রিলিত ১৪০+ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করার আগ পর্যন্ত আপনি পরিশ্রম থামাবেন না।

৫. যদি আপনি ৭০০ টাকা দিয়ে হুদাই এপ্লাই করে থাকেন তবে বলব ভাই সরকারী চাকরী করা লাগবে এমন কিছুনা।সরকারী চাকরী করতে চাইলে আপনাকে পরিশ্রমী ও লেগে থাকার মানসিকতা লাগবে।এছাড়া সেম পরিশ্রমে ব্যবসা বা প্রাইভেট জব করেও আপনি নিজেকে সফল করতে পারবেন।

আরও দেখতে পারেন

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর আপনার যা করা উচিত

১। সিরিয়াস হওয়াঃ প্রথমেই নিজের মাইন্ড সেট করে ফেলতে হবে। আর সেই সাথে পরীক্ষায় পাশ করতে পড়াশুনা করতে হবে নিয়মিত। আজকে পড়ব, কালকে পড়ব, না আজ নয়, কাল নয়, সময় তো আছে। পরে পড়বো, এভাবে করে মাসের পর মাস চলে যায়। বইয়ের উপর ধুলো পড়ে, কিন্তু পড়া আর হয় না। তাই শুধু বই কিনে জমা করলেই হবে না। সিরিয়াস হয়ে সেই বইগুলো প্রতিদিন পড়তে হবে।

২। বিসিএস প্রস্তুতির জন্য দিনে কত ঘন্টা পড়ব? কে কত সময় পড়বেন তা নির্ভর করবে কে কোন বিষয়ে পড়ছেন তার উপর। যদি আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবজেক্ট এ সময় বেশি দিতে হয় তাহলে কম সময় পড়বেন। কোন ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা কম করে বিসিএস এর পড়াশুনা করা যাবে না।

৩। প্রতিদিন একটি বাংলা ও ইংরেজী পত্রিকা পড়া উচিত। পত্রিকার গুরুত্ব অপরিসীম। পত্রিকার লিখা পড়লে বিসিএস এর  লিখিত পরীক্ষায় অনেক কাজে দিবে। তাছাড়া বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে প্রশ্ন আসে। এই ২ বিষয়ের প্রশ্নগুলো সাধারনত পত্রিকা থেকেই করেন প্রশ্ন কর্তারা। তাই নিয়মিত পত্রিকা পড়লে এগুলো থেকে সহজেই উত্তর করা যাবে।

তো প্রিয় দর্শক, এই ছিল আমাদের আজকের ৪৩তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পরবর্তী কার্যকলাপের বিস্তারিত তথ্য। আপনাদের মনে যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে আমাদের সাথে ফেসবুক পেজ এ যোগাযোগ করতে পারবেন। অথবা কমেন্ট বক্সে মন্তব্য জানাতে পারেন।

শেয়ার করে রাখুন

Leave a Reply